অনলাইন ডেস্ক: একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে তিনি ২০০৯ সালে রাজধানীর একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা শুরু করেন। দুই বছর এই শিক্ষকতা করেন। পরে ২০১১ সালে একটি ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন। ৬ বছর সেখানে চাকরি করার পর ২০১৭ সালে নিজেই ব্যবসায় নামেন। এরমধ্যে ২০১৩ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। ২০১৮ সালে চালু করেন ইভ্যালি। এরপর থেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান রাসেল। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে লাখ লাখ গ্রাহককে আকৃষ্ট করেন খুব দ্রুত। জনসাধারণকে প্রলোভন দেখিয়ে নেমে পড়েন ইভ্যালির নামে অফার-বাণিজ্যে। হাতিয়ে নেন গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা।
রাসেল ও শামীমাকে গ্রেফতারের পর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে গত বুধবার গভীর রাতে আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে রাসেলের বাসায় অভিযানে যায় র্যাব। সেখান থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাদের র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আজ (শুক্রবার) সংবাদ সম্মেলন শেষে রাসেল ও শামীমাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানিয়েছেন, ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লোকসানে ছিল। গ্রাহকের টাকা দিয়েই অফিস খরচ ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন তিনি।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাভারে ইভ্যালির সিইও রাসেলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। তবে তার কোম্পানি হাজার কোটি টাকার দেনায় ডুবে আছে। এসব দেনা কী করে পরিশোধ করবেন তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি রাসেল।
র্যাব কমান্ডার আরও জানিয়েছেন, ইভ্যালি নানা প্রলোভনের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়সহ ইভ্যালিকে বিক্রি অথবা দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল সিইও রাসেলের।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানিয়েছে— বিদেশি একটি ই-কমার্সের কৌশল ১:২ আলোকে প্রথম তিনি তার ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথম তিনি একটি ব্র্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। পরবর্তী সময় কোনো আন্তর্জাতিক বা দেশীয় বড় প্রতিষ্ঠানে তার কোম্পানি দায়সহ বিক্রি করে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা ছিল তার। একইভাবে তিন বছর পূর্ণ হলেই শেয়ার মার্কেটে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সর্বশেষ দায় মেটাতে না পারলে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। র্যাবের কাছে রাসেল তার ব্যবসায়িক অপকৌশলের কথা স্বীকার করেন।
র্যাব জানায়, রাসেলের ব্যবসায়িক অপকৌশলের মধ্যে অন্যতম হলো— নতুন গ্রাহকের ওপর দায় চাপিয়ে পুরনো গ্রাহকদের আংশিক অর্থ বা পণ্য ফেরত দেওয়া। যার তার এই দায় ট্রান্সফারের দুরভীসন্ধিমূলক অপকৌশল চালিয়ে তিনি এভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কে যত গ্রাহক তৈরি হয় তার দায় ততই বাড়তে থাকে। রাসেল জেনেশুনেই এই অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
র্যাব জানায়, ইভ্যালি ছাড়াও রাসেলের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ই-ফুড, ই-খাত ও ই-বাজার অন্যতম।
ইভ্যালির ব্যবসায়িক কাঠামোর বিষয়ে রাসেল জানান, রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ইভ্যালির হেড অফিস এবং ধানমণ্ডির আরেকটি স্থানে এর কাস্টমার কেয়ার সেন্টার রয়েছে। একইভাবে আমিনবাজার ও সাভারে তাদের ওয়্যার হাউস চালু করা হয়। কোম্পানির শুরুর দিকে প্রায় দুই হাজার স্টাফ কর্মরত ছিলেন এবং অস্থায়ীভাবে ১৭০০ লোক কর্মরত ছিলেন। সেই সংখ্যা কমে বর্তমানে ১৩০০ স্টাফ ও ৫০০ অস্থায়ী কর্মচারীতে দাঁড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে কর্মচারীদের প্রাথমিক বেতন ছিল ৫ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা বর্তমানে দেড় কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। গত জুন থেকে এ পর্যন্ত কর্মীদের অনেককেই বেতন দিতে সক্ষম হননি রাসেল।
রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন পদাধিকার বলে মাসে পাঁচ লাখ টাকা বেতন নিতেন। তিনি ও তার স্ত্রী ইভ্যালি থেকে কেনা একটি অডি গাড়ি, রেঞ্জ রোভার নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করতেন। তাদের কোম্পানিতে ২৫-৩০টি গাড়ি রয়েছে।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.